নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০০ পিএম, ১৬ জুলাই, ২০২১
২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার ও কারান্তরীণ করার বিষয়টিকে অনেকেই নিছক মাইনাস-টু তত্ত্ব বলে প্রচার করে আসছে। এটি মাইনাস-টু তত্ত্ব ছিল না; বাংলাদেশের রাজনীতি ও এদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতকে নস্যাৎ করার জন্যে এবং আমাদের মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শের বিপরীতে বাংলাদেশকে পরিচালনার লক্ষ্যে এটি ছিল একটি ধারাবাহিক গভীর ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন।
এটি ছিল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি ব্যাকআপ ক্যু - `ক্যু উইথিন দি ক্যু``। ২০০১ সালের ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার জোট সরকার দীর্ঘ পাঁচ বছর যেভাবে দুর্নীতি, অপশাসন ও মানবাধিকারের চরম লংঘন করেছিল তাতে দেশে বিদেশে খালেদা জিয়া চূড়ান্ত অর্থে তার রাজনৈতিক সত্ত্বা হারিয়েছিল। বাংলাদশের রাজনীতিতে তার আর কোনো ক্রেডিবিলিটি ছিল না। দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে খালেদা জিয়ার এই রাজনৈতিক অপমৃত্যুর (political and notional death) পর যখন এটি একটি অবশ্যম্ভাবী ঘটনা যে, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই পরবর্তী নির্বাচনে নিরংকুশ জয়লাভ করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাবেন, ঠিক তখনই ঐতিহাসিকভাবে আওয়ামী লীগবিরোধী শক্তিসমূহ নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠল। তারা ১৫ অগাস্ট, তেসরা নভেম্বর, ২১ অগাস্টের ষড়যন্ত্রগুলোর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই তারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এদেশের রাজনীতি থেকে বিদায়ের আয়োজন করে। সেই ষড়যন্ত্রের প্রকৃত মোটিভ আড়াল করার জন্যই এটিকে তারা নাম দিয়েছিল মাইনাস-টু থিওরি, যেটি প্রকৃত অর্থে ছিল মাইনাস শেখ হাসিনা থিওরি।
সেদিন এদেশের ছাত্র জনতা, আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর প্রতিবাদ আর শেখ হাসিনার প্রতি অভূতপূর্ব আন্তর্জাতিক সমর্থনের কারণে এক-এগারোর সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে, এক-এগারোর ঘটনা ছিল একটি ব্যাক-আপ প্ল্যান অর্থাৎ একটি ঘটনা ঘটানোর পর সেটি ব্যর্থ হলে পরবর্তী ঘটনা হিসেবে এটি ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল। পূর্ববর্তী ঘটনাটি ছিল, বিএনপি-জামাত জোট সরকারের দুর্নীতি আর দুঃশাসনের কারণে পরবর্তী নির্বাচনে যখন তাদের ভরাডুবি নিশ্চিত, সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সংবিধান সংশোধন করে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পরও যখন নির্বাচনে জেতার কোনো ভরসা পাচ্ছিলো না, তখন বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে সংবিধান লংঘন করে তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদ দখল করানো হলো। জনাব ইয়াজউদ্দিন একাধারে রাষ্ট্রপতি ও সরকার প্রধান হলেন। রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এই ক্যু করানোর মূল উদ্দেশ্যই ছিল বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারেন। হাওয়া ভবনের নেতৃত্বে বিএনপি-জামাতের এই ষড়যন্ত্রে ইন্ধন জুগিয়েছিল রাষ্ট্রযন্ত্রে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগবিরোধী গোষ্ঠী। এই ক্যু বাস্তবায়নে তারাই কাজ করেছিল। এই গোষ্ঠী যখন দেখল, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি এদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর অকুন্ঠ সমর্থন রয়েছে এবং তারাই তাকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবে আর ইয়াজউদ্দিনের সরকার কোনোভাবেই এটি প্রতিরোধ করতে পারবে না, ঠিক তখনই ২০০৭ সালের এগারোই জানুয়ারী তারা তাদের ব্যাক-আপ প্ল্যান বাস্তবায়ন করল। অর্থাৎ ‘ক্যু উইদিন দি ক্যু’ (coup within the coup) ঘটাল।
২৯ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে ইয়াজউদ্দিনকে দিয়ে ক্যু ঘটিয়েছিল দৃশ্যত আওয়ামী লীগ বিরোধী এবং বিএনপি-জামাতের পক্ষের শক্তি। আর এক-এগারো অর্থাৎ দ্বিতীয় ক্যু ঘটিয়েছিল সুশীলের আবরণে মূলত একই শক্তি। তারা দুই দলের বিরুদ্ধে কথা বলে সুশীল সমাজের শক্তির একটা মুখোশ পড়েছিল। শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় তাকে সাব-জেলে বন্দি করে রাখার ঘটনাতেই পরিষ্কার হয়েছিল তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল। তারা মাইনাস টু তত্ত্বের নামে মূলত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকেই টার্গেট করেছিল। তারা একাধিক মিথ্যা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজা প্রদান করে জননেত্রীকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে বাইরে রাখতে চেয়েছিল। এটি অনেকটা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মতো। এদেশের জনগণের তীব্র প্রতিবাদ আর শেখ হাসিনার প্রতি তাদের অকুন্ঠ সমর্থনের কারণে এক-এগারোর সরকার সেদিন পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। তারা শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। এগারোই জুন ২০০৮ জননেত্রীর মুক্তির পর তদানীন্তন রাষ্ট্রযন্ত্রে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে। ষড়যন্ত্রকারীদের কেউ কেউ পর্দার আড়ালে যেতে শুরু করে। এদেশের জনগণের তীব্র চাপে নতি স্বীকার করে এক-এগারো সরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়। সেই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। শেখ হাসিনার প্রতি এদেশের মানুষের তীব্র ভালোবাসা ও সমর্থনের কারণে ২৯ অক্টোবরের ইয়াজুদ্দিনের ক্যু আর এক-এগারোর ব্যাকআপ ক্যু পরাস্ত হতে বাধ্য হয়েছিল। তার পরের ইতিহাস আমাদের সবার জানা ।
যদি সেদিন জননেত্রীকে ঐ অশুভ শক্তি বাংলাদেশের রাজনীতির বাইরে রাখার ষড়যন্ত্রে সফল হতো, তাহলে আজ বাংলাদেশের অবস্থা কি হতো, সেটি চিন্তাও করতে পারি না। আল্লাহর অশেষ রহমতে এদেশের জনগণের জন্য আর মুক্তিযুদ্ধের মহান আদর্শের বাতি প্রজ্জলিত রাখার জন্য প্রিয় নেত্রী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।
তিনি শাসনভার নিয়েছিলেন জনগণের জন্য, আমাদের সকলের জন্য। গত এক যুগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এক কার্যকরী রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে। শেখ হাসিনার কারণে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতির মৌলিক পরিবর্তন (paradigm shift) ঘটেছে। তাঁর অসাধারণ দক্ষতা, মেধা, সাহস, দূরদর্শিতা ও অসীম দেশপ্রেমের কারণে তিনি ভূরাজনীতিকে আমাদের অনুকূলে আনতে সক্ষম হয়েছেন। উন্নয়নশীল বিশ্বের খুব কম রাষ্ট্রনায়কই এই ধরণের সফলতা দেখতে পেরেছে। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ কোন উন্নয়ন সহযোগী কিংবা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী নয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নশীল বিশ্বে নতুন অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশের উত্থান ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাই বাংলাদেশ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী কুখ্যাত হেনরী কিসিঞ্জারের ষড়যন্ত্রমূলক অপবাদকে মিথ্যা প্রমান করেছেন। তিনিই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী শক্তির সকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে এবং এই অপশক্তিকে পরাভূত করে জাতির পিতাকে এদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর কারণেই জাতির পিতার খুনিদের বিচার হয়েছে l কিছু খুনী পলাতক থাকায় বিচারের রায় এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।
ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা আমাদের সংবিধানকে শেখ হাসিনাই কলংক মুক্ত করেছেন। পঁচাত্তরের পর অসাংবিধানিক সরকারের সময় এই পবিত্র সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। তিনিই এই সংবিধান থেকে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী সকল বিধান বাতিল করেছেন। তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উন্নয়নশীল বিশ্বে তিনিই একমাত্র সফল রাষ্ট্রনায়ক যিনি সংবিধানকে সকল অপশক্তি থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ (constitutional entrenchment) তৈরি করেছেন যার সুফল আজ গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ পাচ্ছে। তিনিই এদেশে গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যুক্ত ব্যক্তি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের গাড়িতে যখন জাতীয় পতাকা উড়ছিল, তখন এদেশে তাদের বিচার হবে না – এই রকম একটা ধারণায় মানুষ যখন হতাশাগ্রস্ত ছিল, তিনিই তখন জাতির সামনে আশার আলো প্রজ্জলিত করেছিলেন। জাতির পক্ষে ঘোষণা দিয়ে এই নরঘাতকদের তিনিই বিচার করেছেন।
রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুর হার, পরিবেশ, কৃষি, শিল্পায়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা, জ্বালানী নিরাপত্তা, বিনিয়োগ ইত্যাদিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি অনুকরণীয় রাষ্ট্র। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উপনিত হয়েছে। দেশের এই যুগান্তকারী সাফল্যের কৃতিত্ব একমাত্র জননেত্রীর। মানুষের প্রতি তার মমত্ববোধ আর ভালবাসার কারণে তিনি আজ বাংলাদেশকে বানিয়েছন একটি কার্যকরী কল্যাণমুখী রাষ্ট্র। এদেশের মানুষের জন্য তার প্রবর্তিত ‘সোশ্যাল সেফটি নেট’ বা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বে এক অনন্য ঘটনা। জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা সারা বিশ্বে মহা বিপর্যয় সৃষ্টিকারী করোনা মহামারী অসাধারণ দক্ষতা, পারদর্শিতা, সাহস আর অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে মোকাবেলা করছেন। বৈশ্বিক এই মহামারীতে মানুষ বাঁচানোর যুদ্ধে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অত্যন্ত সফলতার সাথে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
আজ ১৩ বছর পর প্রিয় নেত্রীর কারান্তরীণ দিবসে তাঁর প্রতি জাতির পক্ষ থেকে গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বহু নির্যাতন সহ্য করেছেন। তিনি ফিরে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ অন্ধকার থেকে আলোর পথে। তিনি বাংলাদেশকে অনেক কিছু দিয়েছেন। ‘৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের সকল অর্জন জননেত্রী শেখ হাসিনার কারণেই। তিনি একটানা চার দশক বাংলাদেশে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই চার দশকে তিনি একজন সংগ্রামী নেতা থেকে কালজয়ী রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হয়েছেন। এদেশের সকল মানুষের কল্যাণের কথা, বিশেষভাবে দরিদ্র-অসহায় মানুষদের কথা, সবসময় প্রিয় নেত্রীর চিন্তা চেতনায় বিদ্যমান। পিতার মতো এদেশের মানুষকে ভালবেসে তিনি তার পুরো জীবন উৎসর্গ করেছেন। গত বছর জননেত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “আমি তো এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। আমি তো জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি, এটাতে তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই”।
এক-এগারোর প্রেতাত্বারা এখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, এখনও হুংকার দিচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যতদিন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নীতি, আদর্শ, দর্শন ও কৌশল নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, কোন অপশক্তিই বাংলাদেশকে পরাভূত করতে পারবে না।তাঁর দেখানো এই পথ ধরেই আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলায় পৌঁছে যাবো ইনশাল্লাহ।
ড. সেলিম মাহমুদ,
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।